ঢাকা,বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

ধুমপান নিয়ন্ত্রণ নয়, পরিহার করুন

images::: শহিদ রাসেল :::

সকাল ৮টা। হনহন করে পাবলিক প্লেসে হেঁটে যাচ্ছেন এক ভদ্রলোকসম। হাতে সিগারেট। কিছুক্ষণ পর পরই ফুকছেন আর মজা করে ধুৃম ছাড়ছেন। সহজেই অনুমেয় তিনি অফিসে যাচ্ছেন। অবশ্যই রাস্তায় তিনি একা নন। তার চারপাশেই আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। কেউ রুমাল চেপে আত্মরক্ষার চেষ্টা, কেউ হাঁটার গতি বাড়িয়ে আগে আগে চলছে, কেউ ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছে আর কেউ-বা কিছুক্ষণের জন্য দম বন্ধ করে আছে। কিন্তু কোমলমতি শিশু বা তাদের অভিভাবকরা সহ্য করে যাচ্ছেন ভদ্রলোকের অভদ্র আকাম। ধুমপায়ীকে সরাসরি কিছুই করা বা বলার নেই। সবাই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যস্ত। অফিসের বস্, রিকশাচালক, বাড়ির কর্তা, হুজুর, শিক্ষক, দোকানি বা বন্ধুবর জ্ঞানীজন প্রায় সব শ্রেণী পেশার মানুষই জেনে না জেনে এই ধুম ছাড়ার কাজটি করে যান সমানে। শুনতে খুব খারাপ লাগে, কষ্ট হয়, যখন কেউ বলে, ‘সব ছাড়তে পারবো কিন্তু সিগারেট নয়।’

ধুমপানরত কাউকে সালাম দেয়াটা কতটা বিব্রতকর, কদমবুচি করাটা কতটা বিপদজনক তা বলে শেষ করা যাবে না। গত ২৮ মার্চ ২০১৬ তারিখে দৈনিক আজাদীর শিরোনাম ‘জ্বলন্ত সিগারেট হাতে ঘুমাতে গিয়ে…’ নিউজ পড়ে ধুমপায়ীদের একবার হলেও পিলে চমকে উঠবে। এছাড়া শরীরের নীরব ঘাতক এই সিগারেটের জন্য সংসার সমাজ তথা রাষ্ট্রের বিশাল অংকের ক্ষতি যা নিয়ত বাড়ছেই। কারো কারো ক্ষেত্রে এই কুঅভ্যাসটি এতই মারাত্মক যে, ধুম না ছাড়লে পায়খানা-পেশাব ঠিকমতো হয় না। অর্থাৎ খালি পেটে পানি খাওয়ার আগেই তার ‘প্রেয়সী’ সিগারেটে মগ্ন হতে হয়। পরিবারের বড় কর্তার এ চিত্রটি পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য বেশ করুণাদায়ক।

আমার কর্মস্থল মেডিকেল কলেজে হওয়ার সুবাদে ডাক্তারদের সাথে উঠা-বসা নিয়ত ব্যাপার। অবাক লাগে যখন দেখি দেশের একটি প্রথম সারির মেডিকেলের একটি জরুরী বিভাগের প্রভাবশালী কতিপয় ডাক্তার প্রতিদিনই সিগারেট হাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পার করেন। এই ঘটনার পর আর কী বলার থাকে। একজন সেবক অবলীলায় ধুম ছেড়ে যান রোগীদের মাঝে, মৃত্যুর ক্ষণগোনা শিশু(আইসিইউ) ও মহিলার(গাইনী) নি:শ্বাসে। দৃশ্যটি এতটাই নিয়মিত যে ডিপার্টমেন্টসহ সবার সয়ে গেছে। কেউ আর মাথা ঘামায় না।

এছাড়া বিশেষ দিবস উদযাপন, উৎসব-হৈহুল্লুড়ে তরুণ যুবাদের অন্যতম আইটেম হলো সিগারেট। ঐদিনগুলোতে প্রতিদিনের চেয়ে নামি-দামি বিদেশি সিগারেট মাস্ট। কেউ উপদেশ বা বাধা দিতে গেলে স্বাধীনতার রকমারি সংজ্ঞা আওড়াতে থাকে। এতেও যদি কাজ না হয় তবে নির্মমভাবে উপদেশদাতা বা সাহসী কন্ঠকে অপমানিত করে।

সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষেত্রে লেখালেখি আমার কাছে দারুণ লাগে। সেই স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর তথা নাগরিক সাংবাদিকতায় জড়িয়ে আছি। তাই বিকাল থেকে রাত অবধি পত্রিকা অফিসে সময় পার করি। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে সহ-সম্পাদকের দায়িত্বরত অবস্থায় আমার এক সিনিয়র বললেন যে, তিনি এমন কোনো কবি দেখেননি যার শরীর থেকে বিশ্রী গঁন্ধ আসে না। শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল আর ভিতরে ভিতরে অপমানবোধ কাজ করলো। তবে তার ভুল ভাঙ্গাতে সেদিন প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপী তর্কবিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। শেষে তিনি স্বীকার করলেন যে, সবাই নয় বেশিরভাগ কবিই ধুমপান করেন।

স্বাধীনতার সহজ সংজ্ঞা দাঁড় করালে বলা যায়, অন্য কারো ক্ষতিসাধন না করে নিজের জীবনকে নিজের মতো করে গড়ে তোলার সুন্দর পরিবেশ বিরাজমান থাকাই স্বাধীনতা। কিন্তু যারা ধুমপান করেন তাদের জরিমানা করার কথা সরকারি কেতাবে লিখা থাকলেও আইনকর্মকতা বা সাংবাদিক, যারা এই বিষয়টি তুলে ধরবে, তারাই তো ধুমপানে অভ্যস্ত।

আসুন দেশ ও জাতীয় স্বার্থে, জনগণ ও সুন্দর পরিবেশের দোহাই দিয়ে একটা ত্যাগ স্বীকার করি। বিসর্জনের রীতি সমাজ থেকে একেবারে উঠে গেলে পারস্পরিক সম্পর্কে কোনো আন্তরিকতাই অবশিষ্ট থাকবে না। তখন দেহটা যন্ত্র আর মন কাল্লনিক পঙ্খিরাজ পরিণত হবে। কবি ও সাংবাদিক।। তারিখ: ২৯-০৩-২০১৬

পাঠকের মতামত: